
আজকে আমরা একটা পোর্টেবল হেডফোন গিটার অ্যাম্প তৈরি করবো!
জিনিসটা খুব অকাজেরও নয়, আবার খুব একটা প্রফেশনাল কাজের জন্যও নয়।
চাইলে কাওকে গিটারের আওয়াজ দিয়ে বিরক্ত না করেই ইলেকট্রিক গিটার প্র্যাক্টিস করতে পারো, স্পেশালি এখানে বেজ গিটার। অ্যাকস্টিক ঝমঝম করে বাজলেও লিড গিটারে এমনিতে আওয়াজ একটু হবেই।
যদি এরকম একটা চাও যারা বিগিনার গিটার প্লেয়ার, তারা চাইলে সহজেই এগুলো নিজের জন্য একটা বানিয়ে নিতে পারো। তবে নিজে না পারলে কোনো বন্ধু, যে পারে, তাকে বলতে পারো বানিয়ে দিতে!
আর কাওকে না পেলে অর্ডার করতে পারো আমার পেইজে!
এ জিনিসটার ব্যাটারি লাইফ গিগান্টিক, টানা কয়েকদিন আরামসে চলে যেতে পারবে এটার ২০০০ মিলি অ্যাম্প লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি দিয়ে, এছাড়া এটাতে আমি ব্যাবহার করেছি PAM8406 ক্লাস ডি অ্যামপ্লিফায়ার মডিউল, ক্লাস ডি হবার ফলে ভোল্টেজ খুব কম থাকলেও কাজ করে এটি এবং শক্তিও কম প্রয়োজন হয়, বোর্ড সহজে ওভারহিট হয় না। তাই চার্জ থাকে অনেকক্ষণ। চার্জ করার জন্য রয়েছে ব্যাটারি প্রটেকশন সহ TP4056 মডিউল। যার ফলে ব্যাটারি ওভারচার্জ, ওভারডিসচার্জ নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। এছাড়া রয়েছে একটা টোন নব এবং একটা ভলিউম নব। আমি ভুলে এখানে বেস লিখে লেবেল লাগিয়ে রেখেছি যদিও। সব সকম গিটার অ্যাম্পের মতো এটারও একটা কোয়ার্টার ইঞ্চি ইন্সট্রুমেন্ট সকেট রয়েছে।
একটি আউটপুট হেডফোনের জন্য আলাদা করবো এবং আরেকটি আলাদা করবো লাইন আউট কিংবা কোনো রেকর্ডিং ডিভাইসের জন্য।রয়েছে একটা ৫ ভোল্ট চার্জিং পোর্ট। ইউএসবি দিয়ে আরামসে চার্জ করা যাবে! সময়ও খুব বেশি লাগবে না ভালো ফাস্ট চার্জার থাকলে।
জিনিসটা দেখতে সস্তা লাগতে পারে, কারন আমি ফেরিওয়ালা থেকে এই বক্সটা ১০ টাকা দিয়ে কিনে বানিয়েছি।
তাহলে, চলো শুরু করা যাক!

আজকের প্রোজেক্টটা বানাতে দরকার হবে,
- PAM8403 ক্লাস ডি অ্যামপ্লিফায়ার মডিউল।
- দুটো সিঙ্গেল চ্যানেল ১০০কে পটেনশিওমিটার অথবা ভলিউম।
- দুটো ৩.৫ মিলিমিটার স্টেরিও সকেট।
- একটা ১/৪ ইঞ্চি মনো সকেট।
- গিটারের ক্যাবল না থাকলে দুটি ১/৪ ইঞ্চি মনো জ্যাক।
- একটা সুইচ।
- একটা ডিসি সকেট এবং ডিসি জ্যাক।
- এলইডি, আমি হলুদ রঙ নিচ্ছি। এলইডি এর সাথে সিরিজে অবশ্যই ১কে রিসিস্টর লাগাতে হবে।
- একটা ১৮৬৫০ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি।
- একটা TP4056 ব্যাটারি চার্জিং অ্যান্ড প্রোটেকশন মডিউল।
- একটা প্লাস্টিক বক্স অথবা যেকোনো রকম এনক্লোজার যাতে প্রোজেক্টটা সুন্দর করে এনক্লোজ করা যায়।
এখন সব কাজ শুরু করার আগে আমাদের প্রোজেক্ট বক্সটা ঠিকঠাক করে নিতে হবে, প্রোজেক্ট বক্সে আমাদের এলইডি, ভলিউম, ইনপুট জ্যাক, আউটপুট জ্যাক, চার্জিং সকেট এগুলোর জন্য ফুটো করে নিতে হবে,

আমার কাছে ভালো কোন ড্রিল করার টুল নেই, তাই সল্ডারিং আয়রন দিয়েই ফুটো করে নিচ্ছি, কাজটা রিস্কি, কারন এতে বক্সটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়া যে বিট দিয়ে প্লাস্টিক কাঁটা হয়েছে,
সেই বিট দিয়ে আরেকবার সল্ডার করা কঠিন হয়ে যায়। ফুটো কিভাবে করেছি সেটা নিয়ে বিস্তারিত না বলি, কারন সবাই হয়তো আমার মতো একই ম্যাটেরিয়াল দিয়ে বানাবে না। একেকজনের একেকরকম হবে।

জ্যাকের মাঝের পিনটি পজিটিভ, বাহিরেরটি নেগেটিভ বা গ্রাউন্ড। ইউএসবি ক্যাবলের তারের রঙ নানারকম হতে পারে, তবে লাল কালো হলে তো হলোই, সাদা নীল হলে সাদাটি পজিটিভ,
চাইলে ভোল্টমিটার দিয়ে চেক করে নিতে পারো কোনটা পজিটীভ কোনটা নেগেটিভ।
এবার TP4056 চার্জিং বোর্ডে একটা ডিসি সকেট লাগিয়ে দিই। কারও কোনো কনফিগারেশন বুঝতে সমস্যা হলে।
অসুবিধা হলে ডায়াগ্রামটাও দেখে নিতে পারো।
এবার আমাদের এই TP4056 চার্জিং অ্যান্ড প্রোটেকশন মডিউলে আমাদের ১৮৬৫০ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিটি সল্ডার করে লাগিয়ে দিবো। যেহেতু সকেট আছেই, এবং ক্যাবল বানিয়ে রেখেছি, একবার চেক করে নেয়া যাক ঠিকমতো
চার্জ হচ্ছে নাকি ব্যাটারি। যদি মডিউলে লাল এলইডি জ্বলে ওঠে, তবে ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে, এবং যদি চার্জ হয়ে হতে নীল আলো জ্বলে ওঠে, তবে চার্জ কমপ্লিট হয়ে গেছে।

এবার সুইচের একটি তার চার্জিং অ্যান্ড প্রোটেকশন বোর্ডের পজিটিভ আউট পিনে সল্ডার করে লাগিয়ে দেবো। এবং নেগেটিভ আউট পিন থেকে একটা এক্সট্রা তার সল্ডার করে দেবো।
এবার এই এক্সট্রা তারটি এবং সুইচের আরেকটি তার আমাদের অ্যামপ্লিফায়ার মডিউলের পাওয়ার প্যাডগুলোতে সল্ডার করে লাগিয়ে দেবো!


তাই ভাল করে বসিয়ে দেয়াটা জরূরী। আর অনেকে বলতে পারো চার্জিং বোর্ডে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট থাকতেও কেনো আমি ডিসি সকেট ইউজ করছি,
এখানে এটার পোর্ট ভেঙ্গে গেলে ঠিক করতে গেলে পুরো বোর্ড কিনতে যে খরচ পরে তেমন খরচ হবে, তাই আগে থেকেই এই সতর্কতা। এছাড়া ডিসি জ্যাক বেশ মজবুত, সহজে ভেঙ্গে যাবে না,
অন্ধকার বা স্বল্প আলোতেও সকেটে ক্যাবল ঢোকানো যাবে সহজে।

১কে রিসিস্টর হারিয়ে ফেলার জন্য ২২০ ওহম লাগালাম, এটিও খারাপ কাজ করছে না। এটার পজিটিভ প্রান্ত সুইচ থেকে অ্যামপ্লিফায়ারের তারের মাঝে ও নেগেটিভ প্রান্ত নেগেটিভ পিনে সল্ডার করে সংযুক্ত করে দিবো।
এবার পালা মনো সকেটের। মনো সকেট দিয়েই আমরা আমাদের এই ছোট্ট অ্যাম্পে গিটার কানেক্ট করবো। প্রথমে মনো সকেটের পিন গুলোতে কিছু সল্ডার লাগিয়ে টিনিং করে নিই যাতে করে পরে সহজে সল্ডারিং-এর কাজ করা যায়।
এখন মনো সকেটটা আমাদের বক্সে লাগিয়ে দিই।
মনো সকেটের কানেকশন নিয়ে এখন কচরকচর করলে সবাই বিরক্ত হবে, তাই সুন্দর করে ডায়াগ্রাম একে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
স্টেরিও কোয়ার্টার ইঞ্চি সকেটের যেপাশ দিয়ে কেবল ঢোকায় সেপাশ থেকে পিনগুলো হলো গ্রাউন্ড বা নেগেটিভ, তারপর লেফট সিগন্যাল, তারপরে রাইট সিগন্যাল।
যদি মনো সকেট হয় তবে নেগেটিভ আর সিগন্যাল দুটি লাইন থাকবে।
এবার একটা পটেনশিওমিটারের মাঝের পিনে মনো বা স্টেরিও জ্যাকের সিগন্যাল টার্মিনালে কানেক্ট করতে হবে। এবার পটেশিওমিটারের একপাশের একটি পিন গ্রাউন্ড বা নেগেটিভে
এবং আরেকপাশের পিন সরাসরি অ্যামপ্লিফায়ারের ইনপুটে লেফট এবং রাইট দুটিতেই ব্রিজ করে কানেক্ট করে দিতে হবে। নাহলে আমরা অ্যামপ্লিফায়ারের দুটি আউটপুটেই আউটপুট পাবো না।
এবং মনে করে অবশ্যই অ্যামপ্লিফায়ারের ইনপুটের গ্রাউন্ড পিনটি গিটার ইনপুট জ্যাকের নেগেটিভ বা গ্রাউন্ডে কানেক্ট করে দিতে হবে।
.



প্রিন্ট করে ট্রান্সপারেন্ট টেপ দিয়েও লাগিয়ে দেয়া যেতে পারে, যেমনটা আমি করেছি।
কাজ এখন প্রায় শেষ, কিন্তু.... আমি আমাদের অ্যামপ্লিফায়ার মডিউলের দুটি আউটপুটের একটি হেডফোনের জন্য এবং আরেকটি লাইন আউট কিংবা কম্পিউটারে রেকর্ড কিংবা সাউন্ড প্রসেসরে ব্যাবহারের জন্য আলাদা করে ছিলাম। কিন্তু ক্লাস ডি অ্যামপ্লিফায়ার হওয়াতে সুইচিঙের জন্য এই হেডফোন আউটপুট অন্য কোনো ক্লাস ডি স্পিকারে ইনপুট করা যাচ্ছিলো না, ঘ্যারঘ্যার টাইপের নয়েজ আসছিলো কেবল।
কিন্তু ক্লাস এবি, বি ইত্যাদিতে ঠিকই কাজ করছিলো। আবার কম্পিউটারে কিংবা ক্যামেরাতে লাইন ইন করা হলেও ঠিক একইরকম বিরক্তিকর নয়েজ আসছিলো।
তো এই সমস্যা থেকে বের হতে আমি ঠিক করি যে অ্যামপ্লিফায়ার মডিউল থেকে লাইন আউট সকেটের মাঝে একটা ১:১ রেশিওর আইসোলেটিং ট্রান্সফরমার বসিয়ে দেবো।
এতে করে কেবল অডিও সিগন্যাল পাস হবে, কোনো ভোল্টেজ বায়াস ক্যামেরা কিংবা কম্পিউটারে যাবেনা খুব একটা।আমি ঢাকায় কোথাও খুঁজে পাইনি এই অডিও আইসোলেটিং ট্রান্সফরমার, দারাজে পেয়েছি কিন্তু দাম তুলনামূলক আমার তৎকালীন পকেটমানির বাহিরে এবং ডেলিভারি দিতে এক মাস সময় নিবে কারন এটা দেশের বাহিরের প্রোডাক্ট।
তাই আর অপেক্ষা না করে ঠিক করি যে নিজেই একটা বানিয়ে নেবো, তাই মোবাইল ফোনের নষ্ট চার্জার থেকে ট্রান্সফর্মার খুলে সেটাতে নতুন করে ১:১ রেশিওতে ২০০:২০০ টার্ন দিয়ে একটা মনো চ্যানেল অডিও আইসোলেটিং ট্রান্সফরমার বানিয়ে নিই। প্রাইমারি বা ভেতরের কয়েলে ইনপুট এবং বাহিরের কয়েল হবে আউটপুট। অন্য কোনো ভিডিওতে দেখাবো কিভাবে একটা অডিও আইসোলেটিং ট্রান্সফর্মার বানানো যায়। অডিও আইসোলেটিং ট্রান্সফরমারটি অ্যামপ্লিফায়ার মডিউল এবং লাইন আউট সকেটের মাঝে লাগিয়ে দেবার পরে ফলাফল হলো বেশ ভালো। ক্যামেরা কিংবা কম্পিউটারে আগের থেকে বেশ ভালো আউটপুট পাওয়া যাচ্ছিলো।

যাহোক, প্রোজেক্টটা শেষ হলো, আর অনেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, ৬ মাস কোথায় ছিলাম, আসলে রেজাল্ট, অ্যাডমিশন, এছাড়া কিছু পার্সোনাল ফাইন্যানশিয়াল প্রেসারে ভিডিও বানানো হয়ে ওঠেনি। মূলত ফাইনেনশিয়াল
সমস্যার কারনে অনেক প্রোজেক্ট আটকে আছে, করা হচ্ছে না। এখন থেকে চেষ্টা করবো রেগুলার হবার।
আর আমার বন্ধু আতিকের চ্যানেলে ঘুরে আসতে পারেন, সেই আইডিয়া দিয়েছে এটা বানানোর,
আর অসাধারন সব গানের বেজ গিটারে কভার তুলছে সে তার চ্যানেলে। ভালো লাগবে আশা করি সবার। আর আমার নেক্সট প্রোজেক্ট ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে, বি রেডি ঠিকাচ্ছে?
যা হোক, শুভ নববর্ষ!
0 Comments