হেডফোন বদলাতে আর খুলতে হবে না ক্যাবল! -DIY Headphone Switcher Using Toggle Switch

 



ধরেন, আপনারও আমার মতো দুইটা হেডফোন আছে।

একটা চালায় আপনার ছোটভাই, কিংবা আপনি নিজেই, গেইম খেলার পারপোসে।

আর আরেকটা হেডফোন আপনি ইউজ করেন ধরেন গান শোনা, মুভি দেখা, অডিও রিলেটেড কিংবা এডিটিং রিলেটেড কাজে। কোনো সমস্যা নাই, কিন্তু প্রত্যেক সেশনে হেডফোন জ্যাক থেকে খুলে আরেকটা হেডফোন লাগানো একটু প্যারার কাজ, আর সেই সাথে এতে করে কম্পিউটারের অডিও সকেটের আয়ু কমে আসতে পারে, যেটা আমরা অ্যাকচুয়ালি কেউ চাই না। তাই সেই টেনশনে মাথা দিয়ে একটা আইডিয়া বের হয়ে গেলো। বানিয়ে ফেললাম একটা হেডফোন সুইচার। এটাতে আমি একবারে দুইটা হেডফোন সবসময় কানেক্ট করে রাখবো, যখন কেবল যেইই হেডফোনটা ব্যাবহার করবো, কেবল সেইটি সুইচ অন করে দেবো। এখানে সবচেয়ে বেশি দাম পড়েছে মনে হয় আমার সুইচটি কিনতে, এই ডুয়েল গ্যাং সুইচের জন্য আমার ৭০ টাকা গুনতে হয়েছে। জানি না আরোও কমে এমন সুইচ পাওয়া যায় নাকি, আমি খুজে দেখি নাই। তাছাড়া এটা ছোট্ট একটা ডিভাইস, জটিলতাও কম, বানাতেও লাগবে সিম্পল কিছু জিনিস। তাহলে শুরু করা যাক।

 

যন্ত্রপাতি



প্রথমত আমাদের দরকার হবে ছোটোখাটো কিছু কম্পোনেন্টের। প্রথমত প্রজেক্টটা কিছুতে রাখার জন্য একটা প্লাস্টিকের বক্স ব্যাবহার করবো। আর দরকার হবে ৫টা ৩.৫ মিলিমিটার অডিও সকেট, একটা ডুয়েল গ্যাং টগল সুইচ। ডুয়েল গ্যাং হওয়াটা একটু দরকারি, কারন তা না হলে স্টেরিও অডিও সুইচ করা যাবে না।

এই প্রোজেক্টে মূলত এই প্লাস্টিকের বক্স আর ডুয়েল গ্যাং সুইচটাই সবচেয়ে দরকারি কম্পোনেন্ট। সুইচটার দাম পরতে পারে ৫০ থেকে ১০০, ভালো মানের এ ধরনের সুইচের দাম আরো বেশি হতে পারে।

স্টেরিও অডিওর জন্য আমাদের ২টি চ্যানেল সুইচ করা দরকার হবে। মূলত এগুলোই হলো মূল প্রোজেক্ট কম্পোনেন্ট। এছাড়া টুলস বলতে দরকার হবে সল্ডারিং এবং প্লাস্টিকের বক্সে ফুটো করার জন্য ড্রিল মেশিন অথবা সিমিলার কোনো যন্ত্রপাতি। এই গুলো থাকলেই আমরা আমাদের প্রজেক্ট বানানোর কাজ শুরু করতে পারবো।


পদ্ধতি

প্রথমে আমি আমাদের যে প্লাস্টিকের বক্সটিতে আমাদের সম্পূর্ন প্রোজেক্টটি তৈরি করবো, সে বক্সের ঢাকনায় সুইচের জন্য একটা ছিদ্র তৈরি করবো। এটা আসলে যে বানাবে তার চয়েজের উপরে ডিপেন্ডেন্ট। সুইচ যেখানে খুশি বসানো যেতে পারে। আমার কাছে ঢাকনাটা সুবিধাজনক মনে হয়েছে।

সুইচের জন্য ফুটো করা হয়ে গেলে সেখানে সুইচটি দিয়ে তাতে সাথে দেয়া সব নাট এবং ওয়াশার লাগিয়ে দেবো যাতে করে সেটা সে যায়গায় ধরে থাকতে পারে।

আবার মূল যে প্লাস্টিকের বক্সটি রয়েছে তাতে অডিও সকেট লাগানোর জন্য যে কয়টি ছিদ্র দরকার সেগুলো একটা কিছু দিয়ে মার্ক করে নেবো। এতে করে পরে ছিদ্র তৈরি করতে সুবিধে হবে। দেইখা বুঝতেই পারতেছেন, আমার কাছে ছিদ্র করার জন্য প্রপার টুলস নাই, তাই স্ক্রু-ড্রাইভার ইউজ করা লাগতেছে। ভাই, স্ক্রু ড্রাইভার! সিরিয়াসলি!

এবার কানেকশান দেয়া শুরু করার আগে আপনাদের দেখিয়ে দেই কোন পিনের কি কাজ। শুরু করি সুইচ দিয়ে।

সুইচ

এইটা একটা ডুয়েল গ্যাং টগল সুইচ। অনেকে আবার এটাকে বলে ডিপিডিটি সুইচ। ডিপিডিটি মানে ডাবল পোল, ডাবল থ্রো। মানে দুটো সুইচের পোল থাকবে এবং দুইটি সুইচ একসাথে থ্রো করবে।

এই সুইচে টোটাল পিন পাবেন ৬টা। এখানে দুইটি সারি দুইটী ইন্ডিভিজুয়াল সুইচের কাজ করে।

মানে বলতে গেলে ব্যাসিক্যালি এখানে দুইটা সুইচ আছে। বাম সারির কথা ধরি। এখানে মাঝের পিন হচ্ছে ইনপুট, এবং উপরের এবং নিচের পিন দুটি হচ্ছে আউটপুট। সুইচের পজিশন যখন মাঝে থাকে তখন আমাদের দুটি আউটপুটি বন্ধ থাকবে। যখন আমরা সুইচটি নামিয়ে দিবো কিংবা উঠিয়ে দিবো তখন দুইটি পিন দিয়ে আউটপুট পাবো।

ডান পাশের সুইচের সেকশনটি ঠিক একইসময় একইভাবে সুইচিং করার কাজ করে। মানে আমরা এখানে দুইটী সুইচ পাচ্ছি একটার প্যাকেজে।

অডিও সকেট


এবার চলে আসি অডিও সকেটের জন্য।

3.5 মিলিমিটার অডিও সকেট নানারকম পাওয়া যেতে পারে। আমি যেরকম অডিও সকেট পেয়েছি সেটাই আপনাদের দেখিয়ে দিবো।

এই অডিও সকেটের এই পিনটি গ্রাউন্ড, এই পিনটি রাইট অডিও সিগন্যাল, এবং এই পিনটি লেফট অডিও সিগন্যালের জন্য। অন্য দুটি পিন আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, এই দুটি আসলে একটা সুইচের পিন, যখন কোনো জ্যাক এই সকেটে ঢোকানো হয়, তখন এই সুইচটি অন হয়ে যায়, প্রকারভেদে অফ হতে পারে। টিভি, রেডিও টাইপ যন্ত্রপাতিতে যখন হেডফোন ঢোকানো হয়, তখন স্পিকার বন্ধ হয়ে হেডফোন চলতে থাকে, এই সুইচিং ডিটেক্ট করতে এই পিন দুটি ব্যাবহার হয় আসলে, আমাদের এই প্রোজেক্টে এটার দরকার হবে না।

আমাদের দরকার হবে গ্রাউন্ড পিন এবং লেফট ও রাইট সিগন্যাল পিন দুইটি।


 

সার্কিট ডায়াগ্রাম


আর এই হলো সম্পুর্ন সার্কিট ডায়াগ্রামটা। চাইলে আপনারা আমার ওয়েবসাইটে বিস্তারিত সহ পেয়ে যেতে পারেন এটি.

Diagram 




সল্ডারিং


এবার শুরু হবে সল্ডারিং-এর কাজ। প্রথমে মাইক্রোফোনের সকেট দুটো নিয়ে কাজ শুরু করবো। দুটোর গ্রাউন্ড কানেকশান এবং সিগন্যাল কানেকশান একসাথেই হবে।

আমি আমার নিজের সুবিধার্থে মাল্টিমিটার দিয়ে চেক করে নিচ্ছি অডিও সকেটের পিন আউট যাতে কানেকশন দেবার সময় ভুল না করে বসি। মাইক্রোফোনের জন্য একটা সিগন্যাল দিলেই চলে,কম্পিউটার নিজে থেকে স্টেরিও কিংবা মনো ব্যালেন্স করে নেয়। এখানে যদিও আমি মনো সিগন্যালের ব্যাবস্থা করে কেবল মাত্র দুটি তার সল্ডার করেছি, কিন্তু পরবর্তীতে আমি আরোও একটা তার সল্ডার করে দিয়েছি যাতে করে স্টেরিও মাইক্রোফোনও ব্যাবহার করতে পারি। একটা তারই তো, বেশি কিছু তো না। পরে স্টেরিও মাইক লাগাতে হলে ঝামেলা থেকে সহজে বাঁচা যাবে।

যা হোক, আরেকটা তার লাগাবো পরে, আগে এই সকেট দুটো বক্সে বসিয়ে নিই। এর জন্য সকেটের সাথে দেয়া ছোট নাটগুলো ব্যাবহার করবো।


এবার আসি হেডফোনের জন্য অডিও সকেটের জন্য। এই সকেট সবগুলোর গ্রাউন্ড পিন একসাথে থাকবে। কেবল সকেট দুটোর বাকি দুটো সিগন্যাল পিন ডুয়েল গ্যাং সুইচের সাথে যাবে। সংযোগ দেবার তারগুলো সল্ডার লাগিয়ে লেফট এবং রাইট সিগন্যাল ঠিক রেখে তারগুলো সল্ডার করে দেবো। তারপর ঠিক একই ভাবে লাইন ইনপুট সকেটের তারগুলো সুইচের মাঝের পোলে সল্ডার করে দেবো।

সল্ডারিং-এর কাজ শেষ হলে আগের মতই অডিও সকেটের সাথে দেয়া নাট গুলো দিয়ে অডিও সকেটগুলো প্লাস্টিকের বক্সের সাথে শক্ত করে সেট করে দেবো।

এবার কিছু লেবেল তৈরি করে প্রিন্ট করে নেবো, লেবেল ইচ্ছামতো বানিয়ে নিতে পারেন, চাইলে আমার ওয়েবসাইটে একটা পিডিএফ ফাইলের লিংক দিয়ে দেবো, সেটিও প্রিন্ট করে নিতে পারেন।

এই লেবেলগুলো  ট্রান্সপারেন্ট টেপ দিয়ে বক্সের গায়ে লাগিয়ে দেবো। তাহলে আর ভুল সকেটে ভুল জ্যাক লাগিয়ে ফেলবো।

ব্যাস! মোটামোটি ভাবে মনে হচ্ছে যে প্রোজেক্টের কাজ শেষ! দেখা যাক টেস্ট করে।


টেস্টিং

এই সুইচটা ইউজ করতে হলে আমার দুটি ৩.৫ মিলিমিটার মেল ট মেল অক্স ক্যাবল দরকার হবে। সেই অক্স ক্যাবল দুটো সুইচের মাইক ইন এবং অডিও ইনপুট জ্যাকে লাগিয়ে সেটা কম্পিউটারের হেডফোন এবং মাইক্রোফোন জ্যাকে লাগিয়ে দেবো। আর আমার যে দুইটা হেডফোন আছে, সেই দুইটা সুইচের আউটপুটে কানেক্ট করে দিই।

রিভিউ 


দেখা যাচ্ছে যে, ঠিকঠাক ভাবেই কাজ করছে সুইচারটি। মাইক্রোফোন এর জন্য ওয়ারিং করার জন্য আমি কোনো শিল্ডীং ইউজ করি নাই, বাট তাও তেমন কোনো নয়েজ শুনতে পাইনি।

দুইটি হেডফোনে সুইচ করার সময় সামান্য একটা ক্লিক করার মতো নয়েজ পাওয়া যায় হেডফোনে। এছাড়া কোনো নয়েজ নেই। তবে সুইচের মান খারাপ হলে সুইচিং করার সময় সুইচ ফল্ট করতে পারে, এতে করে দুই কানে স্টেরিও নাও শুনতে পেতে পারেন অথবা সুইচ নাও করতে পারে। এটা আসলে সুইচের মানের উপরে নির্ভর করে। চেষ্টা করবেন ভালো মানের সুইচ ব্যাবহার করার জন্য।

এছাড়া অনেক সময় মনে হতে পারে যে সাউন্ড কম লাগছে। এটা আসলে ইম্পিড্যান্স বেড়ে যাবার জন্য হতে পারে। তারের ডিস্ট্যান্স বেড়ে যাওয়ায় তারের ইম্পিডেন্সও বেড়ে যায়। যার কারনে অডিও সিগন্যাল ফ্লো করতে আরো বেশি ভোল্টেজ দরকার হয়। সেকারনে মনে হতে পারে যে সাউন্ড কম পাওয়া যাচ্ছে। একারণে ছোট সাইজের তার বা অক্স ক্যাবল ব্যাবহার করতে পারেন অথবা হেডফোন অ্যাপ্লিফায়ার ইউজ করতে পারেন।

Post a Comment

0 Comments